শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:১২ অপরাহ্ন

অবিচল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী

অবিচল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী

স্বদেশ ডেস্ক:

গেল বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার কিছুদিন আগের গল্পটা ছিল ভিন্নতর; ছিল সমালোচনা, গুজব ও রকমারি রসিকতায় ভরপুর। আড্ডাপ্রিয় বাঙালির একটা বড় অংশের মনে এই বিশ্বাস ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, এই রোগ এসেছে অমুসলিমদের জন্য। আবার কেউ কেউ বলেছেন, চীন ষড়যন্ত্র করে সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভয়ঙ্কর ভাইরাসটি চীনা ল্যাবে তৈরি হওয়ার পর সেদেশেই বস্ফোরিত হয়- এমন কথাও হচ্ছিল দেশে-দেশে।

যখন চীনের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা আঘাত করে তখন মানুুষের গল্পের ভাষা বদলে যায়; কিন্তু বদলায়নি সমালোচনার দৃশপট। নিজস্ব ভাষায় ও চিন্তায় সরকারকে পরামর্শ দিতে থাকেন দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাইরের মানুষরাও; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার সার্বক্ষণিক আপডেট জানার পাশাপাশি বিশ্বের বিখ্যাত জার্নালের ভাষ্য কী, সেদিকেও নজর দিচ্ছিলেন তিনি। একদল গবেষক সঙ্গে নিয়ে এই রোগ থেকে উত্তরণের পথে যাওয়াই ছিল তার শপথ। প্রতিদিন শত-সহস্র সমালোচনা ভেদ করে তিনি করোনা প্রতিরোধের ন্যায্য পথে এলেন এবং বলা যায় জয় করলেন- এমন ভাষ্য বিশিষ্টজনদের।

দেশ ও বিদেশের বিশিষ্টজনরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী ক্ষমতাধর উন্নত দেশগুলো যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দিশাহারা, তখন বাংলাদেশে করোনার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও সাইক্লোন আঘাত করে। ঠিক তখন এদেশের লড়াইটা ছিল অন্যদেশ থেকে ভিন্ন।

লকডাউন হয়ে যাওযায় অন্যান্য দেশের মতোই মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হন শিল্প উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গার্মেন্টসকর্মী, পরিবহনশ্রমিক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক ও রিকশাচালকসহ অনেকে। সবাই যেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য সরকারকে খাতভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং আর্থিক সহায়তা দিতে হয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে সাহসী ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘দেশের একটি মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না’- এমন দৃঢ় উচ্চারণ তিনি বার বার করেছিলেন। তার দৃঢ় ভূমিকায় করোনা মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল; অব্যাহত ছিল দেশের অবকাঠানো উন্নয়নের কাজও। পদ্মা সেতু এপার-ওপার দৃশ্যমান হওয়াসহ বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, নৌ ও সড়কপথের কার্যক্রম বেগবান ছিল। এর অনন্য নজির চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি উন্নয়নশীল দেশের সনদ হাতে পাওয়া।

জাতিসংঘের পর্যালোচনায় ২০১৯ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য মাথাপিছু আয়ের মানদ- নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ২২২ মার্কিন ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮১৭ ডলার। করোনাকালে সংকটের মধ্যেও বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদ-ের প্রায় ১.৭ গুণ।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সারাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের মাধ্যমে দেশের মানুষের খবর রেখেছেন, সহায়তা দিয়েছেন। দেশের মানুষ যেন অনাহারে এবং অর্ধাহারে না থাকে, সেদিকেও ছিলেন পূর্ণ মনযোগী। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় যে চারটি বড় দেশ সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

অর্থনীতি, রাজনীতিসহ নানাদিক থেকে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর হার এখনো বেড়েই চলেছে ভারত ও পাকিস্তানে। তবে বাংলাদেশে মৃত্যুহার পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় কম।

শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বেই সরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক, গার্মেন্টসকর্মী, ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্প, জাহাজশ্রমিক থেকে অসহায় দিনমজুর; কেউই দান-প্রণোদনা থেকে বাদ পড়েননি।

ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় ত্বরিত গতিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪ নার্স, যাদের দেশের বিভিন্ন কভিট-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে দুই হাজার চিকিৎসককে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ করা হয়।

গত পড়শু কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসিক বলেছেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মহামারী মোকাবিলায় সফলতা দেখানো নারী নেত্রীদের একজন শেখ হাসিনা। কিউসিকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন। মহামারী মোকাবিলায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সফল তিন নারী নেতার একজন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি যে দুজনের প্রশংসা করা হয়েছে তারা হলেন- নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন ও বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোতলি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত বুধবার প্রকাশ করেছে- এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে রপ্তানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রপ্তানির ওপর ভর করে চাঙ্গা অর্থনীতির দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বাংলাদেশ। নিবন্ধে বলা হয়, গত এক দশকে ডলারের হিসাবে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানির মাধ্যমে এই সাফল্য এসেছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও জোরদার হবে।

করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে মুজিববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে ১ কোটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছেন।

এতসব কর্মযজ্ঞের পরও টিকা প্রথম ধাপে বাংলাদেশ পাবে কিনা, টিকা পাওয়ার পর সেই টিকা নেওয়া ঠিক হবে কিনা; এ নিয়েও গুজব ও সংশয় চলে- এমনটা বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে তিনি সেই সংশয়ের অবসান ঘটিয়েছেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন টিকা নিচ্ছেন না। এই টিকা ভালো হলে নিশ্চয়ই তিনি নিতেন- এমন সমালোচনাও হয়; কিন্তু অবশেষে নেত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের বিরাট সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে করোনর টিকা দিয়ে তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রোহানা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশ শীর্ষ পর্যায়ে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877